ইদানিং ফোক গানের দিকে ঝুকেছেন অনেকেই। আবার ফোক গান করে জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন অনেকই।তাই বর্তমান সঙ্গীত এবং সঙ্গীতশিল্পীদের শিল্পবোধ প্রসঙ্গে প্রাণের বাংলার সঙ্গে কথা বলছেন সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী।
* দীর্ঘদিন ধরে আপনার কোন নতুন একক অ্যালবাম আসেনি। এর কারণ কি?
-একক অ্যালবাম করা হয়নি অনেক দিন ধরে তবে মিশ্র অ্যালবামগুলোতে গাইছি। বরাবরই আমি এমনই ছিলাম। একক অ্যালবাম করতে হবে, অনেক সুনাম অর্জন করতে হবে এমন চিন্তা ছিল না। এক কথায় আমার মেজাজ মতো কোন কিছু না হলে আমি করতে রাজি না।
*আপনার গানগুলো নতুন শিল্পীরা আপনার মতো গাইতে পারছেন কি?
-যারা গাইছেন তারা আমার অ্যালবাম অথবা অনলাইন থেকে গান সংগ্রহ করে কণ্ঠে তুলে গাইছেন। এভাবে শুনে শুনে উঠানো গান কতটা আর প্রাণবন্ত হবে? সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। ডিজিটাল যুগের শিক্ষার্থীদের মেধা অনেক, কিন্তু শুধু মেধা দিয়ে তো গান-বাজনা হবে না। আমার কাছে কোন ছেলে মেয়ে আজ পর্যন্ত আসেনি। কেউ এসে কখনই বলেনি যে, আপনার এই গানটা গাইতে চাই। গানটি কিভাবে গাইবো? যদি আসতো আমি অনেক বেশি খুশি হতাম। একটা বেদনা আমার মধ্যে কাজ করে। আমি যদি কবরে যাই আমার বিদ্যার পুরোটাই কবরে চলে যাবে। আমার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার দুই আনাও কাউকে দিয়ে যেতে পারলাম না।
* রিয়েলিটি শো থেকে তৈরি তারকা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
-তারকা হলে তো আকাশে থাকা লাগে। দুই এক বছরের মধ্যেই তো তারা ঝরে পড়ছে! যে যেখান থেকেই আসুক না কেন সঙ্গীতে আসতে চাইলে শিখেই আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প পথ নেই। প্রতিযোগিতায় যখন তারা গান গায়, তখন তারা কার গান গায়? হয়- সুবির নন্দী, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লাইলা না হয় বারী সিদ্দিকীর গান। তাহলে তাদের গান কোথায়? প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়েও তারা অন্যের গানই গেয়ে বেড়াচ্ছে। শিল্পী হতে হলে তো নিজের গান থাকা লাগবে। প্রত্যেক প্রতিযোগীই অ্যালবাম করছেন। অ্যালবাম থেকে তো গান বেরিয়ে আসছে না। আমাকে দেখান যে এর মধ্য থেকে একটা গান বেরিয়ে এসেছে!
*সঙ্গীতের বর্তমান সময় নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
-শুধু সঙ্গীতই না। সবাইকে সম্মান জানিয়েই বলছি, শিল্প সংস্কৃতির প্রতিটি শাখা-প্রশাখাতেই একটা স্থবিরতা চলে এসেছে। আরও একটা সমস্যা হলো এখন সবকিছুই আমরা কৌশলে টাকার বিনিময়ে পেতে চাই। এটা কোনদিন হয়নি, হবেও না। বড় বড় কম্পিটিশন করে কিংবা টাকা খরচ করে টিচার ভাড়া করলেই হবে না। শিল্প এত সহজ না। মিডিয়া কখনোই টিচার হতে পারে না। মিডিয়া এখন সব বিষয়ে টিচার হয়ে গেছে। আমরা এখন উপদেশ নিচ্ছি কম্পিউটার থেকে। কত কাঠখড় পুড়িয়ে একজন শিল্পী তৈরি হয়, তার কাছে শিক্ষা না নিয়ে শিক্ষা নিচ্ছে কম্পিউটার থেকে!
*এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পথও নিশ্চয়ই আছে?
-আমাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে যদি আমাদের স্বকীয়তা ফিরে পেতে চাই আমাদের সৎ হতে হবে। আগে একজন সঙ্গীতশিল্পী বেসিক তৈরি করতে কিছু সময় ব্যয় করত। এখন তো কেউ সেটা করে না। শেখে না, কষ্ট করে না। বোঝে না ফাঁকিটা সে নিজেকেই দিচ্ছে। এ রকম প্রতিটা ক্ষেত্রেই। গুরুর কাছে যেতে হবে। কোন কাজ শুরু করার আগেই শপথ নিতে হবে। আমি ভালো কাজ করতে চাই।
*সঙ্গীত নিয়ে আপনার পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
-সঙ্গীতই তো আমার স্বপ্ন। তাই নেত্রকোনোয় ‘বাউল বাড়ি’ নামে একটি বাড়ি বানিয়েছি। কাজ শেষের দিকে। ‘বাউল বাড়ি’ বানানোর উদ্দেশ্য এলাকার বাচ্চাদের গান শেখানো।
ফয়েজ আহমেদ