
শাম্মী মারজিয়া
শাক-ভাত-মাংস
যেই দেখে শাকভাত
সেই বুড়ার মাথায় হাত,
যেই দেখে গোশত ভাত
সেই বুড়ার কুটকুটি হাসি
ভাত খায় দুইগুণ বেশি…
যে বেলায় পাতে মাছ, মাংস পড়তো না, আমাদের তো বটেই বাড়ির বিড়ালেরও মুখ ভার। মা সবজি তুলে দিতো আর এই ছড়া ফোড়ন কাটতো।
আমরা শুকনো মুখে শাক, ডাল মেখে গিলতাম মায়ের ভয়ে।
বিড়ালটা সাহসী ছিলো বটে, সে ভাতে মুখ ঘসে চলে যেত। মুখে নিতো না।
তবে আমার মায়ের শাকভাজির পাশে গরুর গোশত ভুনাও ফেল। বড়জোর টেনেটুনে পাশ মার্ক পাবে।
যে শাকই হোক না কেন, এমনকি জলভরা আদুরে পালংশাক পর্যন্ত হতো ঝরঝরে।
সঙ্গে গাঢ় সবুজ রং।
মিষ্টি স্বাদ, এমনকি মেথিশাকও মধুর লাগতো।
মৌ মৌ সুগন্ধ আর কি মোলায়েম।
মুখে নিতেই মাখনের মতো গলতো।
সেই শাক ভাজির সঙ্গে ডাল থাকতো। ডালটাও তাঁর স্পেশাল।
সমপরিমাণ মসুর, ভাজা সোনামুগ, মাসকলাই ও ছোলার ডাল, একমুঠ আড়হড় আর খেসারি ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করতো।
আজীবন।
কখনো বাগাড় দিতো পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে। কোনোদিন পাঁচফোড়ন। কখনোবা শুকনো লংকা, জিরে। মেথি, কালিজিরার ফোঁড়ন ও খেতাম।
আমের সিজনে হতো সেই মিশালি ডাল দিয়ে আমডাল।
চালতার সময় মিশতো চালতা।
যে সিজনে টক যা পাওয়া যেতো, আমড়া, জলপাই, বেলেম্বো, খোসাসমেত কাঁচা তেতুল …
আহা্ অমন স্বাদের শাক, ডাল রান্না আর কোথাও খাইনি জীবনে।
তবুও ছেলেবেলায় পাতে শাকসবজি পড়লে মন গোশত খুঁজতো। কতোপদের করে যে মাংস রাঁধতো মা। ঝোলঝাল, শুকনো ঝুরি, মাখামাখি কষানো। কখনো কখনো ঝোলে যোগ করতে আলু, কখনোবা কাঁচা পেঁপে, মানকচু, কাঁঠালের বিচি, মাংসের হাড্ডি দিয়ে মুলা কিংবা ওলকচু।
তা যেভাবেই রাঁধুক না কেন, দুইটুকরা মাংস সঙ্গে দু’চামচ ঝোল মেখেই প্লেটের ভাত সাবাড়। শেষে শুধু শুধু ডালের সঙ্গে শাকভাজি প্লেটে নিয়ে খেয়ে নিতাম।
এখন তো নিজেই রাঁধি। মনের মতো করে মাংস, মায়ের মতো করে শাকভাজি, ডাল। কিন্ত অমন স্বাদের কখনোই হয়নি।
কখনোই হয় না।
শুধু প্রতিবেলা খাবার পাতে আমার মন চায় মায়ের হাতের শাকভাজির সঙ্গে ঘন ডাল, ভাজা শুকনো মরিচ কচলে, আচার দিয়ে মেখে একপ্লেট ভাত খেতে।
ছবি: গুগল