
মেহেদী সম্রাট
প্রত্যেক বছর। নির্দিষ্ট একটা মাসের সবক’টা বৃহস্পতিবার। ঠিক রাত যখন বারোটা পেরোয়। তখনি উঠে আসে ওরা..!! একটা.. দু’টা… তিনটা… করে করে সাতটা লাশ..!! গোরস্থানের পূর্বকোন থেকে।
লাশ গুলো সারিবদ্ধ হয়। যুদ্ধের ওয়ার্ম আপ করে। তারপর মার্চ করে অগ্রসর হয়। সারিবদ্ধ হয়ে। ওদের শরীর আবৃত থাকে কাফনের কাপড়ে। ওরা পিছনে ফেলে অগ্রসর হয় শরীরের মাঁটি ও রক্তের গন্ধ..!! ওরা এগোতে থাকে। ওদের কারো কারো কপালের গুলির ক্ষতগুলো তাজা হয়ে ওঠে যেন..!! রক্ত ঝরে পুরানো গুলির ক্ষত থেকে। প্রথমে দু’এক ফোটা করে। তারপর বয়ে চলে রক্তের স্রোত। সব বুলেটের ক্ষত। কারো কপাল থেকে, কারো পাঁজর থেকে, কারো ঝাঁঝড়া হয়ে যাওয়া বুক থেকে, কারো চোখের শূন্য কোটর থেকে।
তবুও এগোতে থাকে ওরা। সারিবদ্ধ ভাবে। মার্চ করে করে। গন্তব্যের দিকে। ওরা যখন ভার্সিটি চত্বর অতিক্রম করে। তখন থমকে দাঁড়ায় হঠাৎ..!! ওরা দেখতে পায় যেন..! হলের যে রুমে প্রতি রাতে জেগে জেগে ওরা পোস্টার বানাতো, স্লোগান লিখতো, – সেখানে আজ নেশাগ্রস্ত মেধাবীর আবাস..!
ওরা পুনরায় চলতে শুরু করে। স্মৃতিময় রাজপথ ধরে। একসময় ওরা পৌছেও যায় গন্তব্যে। সারিবদ্ধ হয়ে, মার্চ করে উঠে আসে শহীদ মিনারের বেদী তে। তারপর ওরা স্বীকার করে নেয় অকপটে, “বাহান্নো তে আমাদের আত্মদান বৃথা ছিলো। এ জাতি আত্মবিস্মৃত।”
এরপর সেই সাতটা লাশ, তিনটা মিনারের সামনে আত্মাহুতি দেয়। তখনো ওঠেনি ভোরের সূর্য। লাশ গুলো মিলিয়ে যায় অদৃশ্যে। এভাবেই প্রতিটি ফেব্রুয়ারি তে জেগে ওঠে ওরা। তারপর পুনরায় আত্মাহুতি দেয়। আর ওদের উত্তরসূরি রা আত্মবিস্মৃতই রয়ে যায়…….

লাবনী আখন্দ