
রায়হান শরীফ,আমেরিকা থেকে
প্রশ্ন
এত আলো ঝলমল উৎসবের সন্ধ্যায় তুমি আমাকে একা ফেলে যাও কেন? ভাস্কর্যেরমত স্থিরতায় ধাক্কা লেগে শহরে বেজে ওঠে এক মায়াময় সিম্ফনী!অজস্র শব্দপুঞ্জের ভেতর এক ঝাঁক পাখি ডানা ঝাপ্টাচ্ছে। তুমি দূরে কোথাও তার চিহ্ন কুড়োচ্ছো তড়িঘড়ি। আমার কাছে এখানটায়, এই ভাস্কর্যের পাদদেশে কিংবা সুদূর ওই অলীক মেঘমালার নিচে ধ্বনির যে বিস্তারণ—সে সব মিলে এক দৃশ্যকাব্য। এখানে আদি-ভৌতিক সব দৃশ্যে আর ওখানে কুহক ধ্বনিতে আমাদের চির দ্বীপান্তর! আমরা আমাদের একলা ফেলে কোথায় যাই?
একটা নিস্তব্ধ রাতে তুমি আমার মধ্যে বাজতে থাকো—যেন হাজারটা ঝিঁঝিঁ ডাকছে তারস্বরে একটানা। আমাদের কসমিক শুন্যতা নিয়ে আমরা এখানে-ওখানে, মানুষের ব্যস্ত ছায়ায় জবুথবু দাঁড়াই। শিশুর পেলব ত্বকে রোদ পড়ে মায়াবী হয়ে ওঠে পড়ন্ত বিকেল। ঠোঁটে বয়ে আনে খাদ্যকণা সাবধানী চড়ুই। ধুলোর আস্তরে ঢেকে যায় রঙিন জারুল। এই সব মোহন কোলাজের ভেতর আমিও রয়েছি মিশে ছোপ ছোপ হলুদ,সবুজ।
দৃশ্যকাব্যের পার থেকে, আলোর পরিখা ছেড়ে, জনস্রোতের ঢেউভেঙ্গে, নীল-সাদা আকাশের ভাসমান তুলোর মেঘের নীচে আমাদের কবে কখন দেখা হয়, মুনিয়া? জল ফেলে গেছে ঝড়, পাতা রেখে গেছেঘূর্ণি, ছায়া মেঘ, একটা গভীর দাগমাটিতে রেখে গেছে ছিমছাম কোষা নৌকা; মুনিয়া, আমরা আমাদের একা ফেলে কোথায় যাই, কেন যাই?
নদীর অতল তলে জলের শব্দ কেমন? বুকের গভীরে থিতিয়ে পড়া আঁধার? পড়ো বাড়ির বন্ধ কবাটের ওপাশে দেয়ালে দেয়ালে কথার কারুকাজ। প্রাচীন সিন্দুকের ঢাকনা খুলে কেউ দেখেনি কি লেখা ছিল অমোঘ বাণীর মত।সারাদিন-রাত মাইম করে কেন ভুলে গেলাম তোমাকে বলার মত কথা? তোমাকে দেখার চোখ? তোমার পাশে হাঁটার অনায়াস মুদ্রা। আমরা আমাদের অনেক অগোছালো করে কবে আর মিশে যাবো কোন এক মেঘমেদুর প্রশ্ন মুখর সন্ধ্যায়? এত এত স্বপ্ন ছেড়ে,আশ্বাস ছেড়ে, নিজেদের নিজস্ব উড়াল ছেড়ে, আমাদের যৌথতা ছেড়ে, আমরা কেন যাই,মুনিয়া? আমরা আমাদের একা ফেলে কোথায় যাই?
আমরা চেয়েছি আগুন
আমরা দু’জন দুই সাঁকোতেই যাচ্ছি
তোমার নীল শাড়ির ছায়া পড়েছিল জলে।
উটকো বাতাসে আমাদের চুল উড়ছিল
আমাদের কথা কখনো কেউ শোনেনি!
চোখের দিঘীতে আমরা সাঁতরেছি ঠিকই
আমরা সে কথা কেউ কাউকে বলিনি।
আমাদের কোথাও যাবার কিছু ছিল না
আমরা বহুদূর যার যার পথে চলেছি।
আমরা বলেছি সরে যাও তুমি ছায়া
সরে যাও তুমি পষ্ট করেই দেখি!
দু’জনে দু’টি পথরেখা এঁকে নিয়ে
জেনে গেছি শুধু একটিই ছিল গান।
বৃক্ষের থাকে অনেক রকম শিকড়
আমরা চেয়েছি অনেক রকম আগুন!