
শামীমা জামান
ঐশীর সাজা কমে যাবজ্জীবন হয়েছে । অনেকেরই দাবী ছিল এটি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে এ নিয়ে অনেক রকম লেখালেখিই চলেছিল। দু দিন আগে রায় ঘোষনার পর ঐশীকে নিয়ে অনেক সহানুভূতিপূর্ণ লেখা লিখেছেন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা । তাদের ভাল মনের আবেগময় আদরমাখা ভাষায় ঐশীর প্রতি রাষ্ট্রের পরবর্তী করনীয় পরিসেবার কথা তারা বলেছেন । এখন কথা হল ঐশীর মত একজন ভয়ংকর খুনীর কি এত সহানুভূতি প্রাপ্য ? কিম্বা যে রায় হল তা কি অপরাধপ্রবণ মানুষের জন্য কোন ভাল বার্তা বয়ে আনলো ?
যে সব যুক্তিতে এই সহানুভূতি ঐশীর জন্য হতে পারে এমন করে ভাবলে প্রতিটি ভয়ঙ্কর অপরাধীর দিক থেকে অনেক ভাবে ভাবা যায় । যেমন ধরুন বেশ কয়েক বছর আগে এক মা পরকীয়ার কারনে তার শিশু সন্তান কে হত্যা করে পাঁচ তলা থেকে ফেলে দিয়েছিল । এখন আমরা যদি ঐ মায়ের ব্যাক্তিগত জীবনে যাই সেখানে সে তার স্বামীর কাছ থেকে জৈবিক , মানসিক সব দিক থেকেই অতৃপ্ত ছিল । যার কারনে একটি ভালবাসার সম্পর্কে সে জড়িয়ে যায় । এখন ওই ভালবাসা কে জয় করতে তার এ ছাড়া কোন উপায় ছিলনা । এইভাবে কেউ ভাবতে পারেন?পারা উচিতও না। কারন মানুষ তো পশু নয়।
ইয়াবা সেবন করে এক বাবা তার তিন বছরের শিশু কন্যাকে মেরে ফেলে । সেই বাবা কে কি সহানুভূতি দেখানো যায় তার পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে?
ঐশীকে তার বাবা মা মানুষ করতে পারেন নি এই কথাটি খুব শোনা গেছে । কথা সত্য তবে পুরোপুরি নয় । আপনি খুব সচেতন একজন ভাল মা । সন্তানের জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে বাচ্চাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের গেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বাসায় ফেরেন না, অন্য মা দের সঙ্গে স্কুলের সামনেই আড্ডায় ফেনা তোলেন ‘’ভাবী আমার বাচ্চাটা যে লক্ষী না, মাশাল্লাহ ‘’…ওদিকে স্কুলের ভিতরে ,ধরুন টয়লেটে ওই স্কুলের আশপাশ থেকে ইয়াবা এজেন্টের চক্রে যে ছেলেটি জড়িয়েছে সে সেই লক্ষী ছেলেটিকে ওই পথে টানছে বিক্রেতাদের মহৎ বানী স্মরণ করে ‘’তুমি পাঁচ জনকে ধরাতে পারলে তোমার টা ফ্রি …’’ । এখানে ঐশীর বাবা মায়ের চেয়ে অনেক বড় অপরাধী আজ রাস্ট্র স্বয়ং !
ঐশীকে কেন জানি একটু অন্য ধাতেরই মনে হয়েছে । অনেক বড় দাগী আসামীদের ও পুলিশ হেফাজতে চলে যাওয়ার পরের চেহারায় অনুতপ্ত চিত্তের ছাপ লক্ষ করা যায়। কিন্তু ঐশীর চেহারায় কি আশ্চর্য ধরণের দৃঢ়তা। যেন এখনো সে তার মায়ের বুকে বসে ছুরি চালনায় ব্যস্ত , মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হলেই তার সব স্বাধীনতা , সব উপভোগের জয় হবে !
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন তাকে বেকসুর খালাস দিলে ভাল হত ! বাঙ্গালী যে কি পরিমান আবেগপ্রবণ জাতি এ থেকেই তা বোঝা যায় ।
অপরিপক্ক বয়স বা মাদকাসক্তির কথা বিবেচনা করে রাস্ট্র ঐশীকে শোধরানোর সুযোগ দিতেই পারে কিন্তু রাষ্ট্র কি আদৌ চায় ঐশী বা ঐশীরা শোধরাক ।
মনে রাখতে হবে ঐশী একটি মাত্র চরিত্র নয় । ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একটি বড় অংশই আজ ঐশী ! রাস্তায় কাগজ কুড়ায় , ফুল বিক্রি করে ঐশী । আপনার ভাইয়ের ছেলে , আমার বোনের মেয়ে ঐশী !
ছবি: গুগল