আহসান শামীমঃ ব্যাটিং ব্যর্থতায় পচেফস্ট্রুম টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ দল। ৪২৪ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পঞ্চম ও শেষ দিন ৯০ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা।টাইগারদের ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৩২.৪ ওভার।
চোটের জন্য শেষ দিনে মাঠে ছিলেন না প্রতিপক্ষের সেরা পেসার মরনে মরকেল। উইকেটে বোলারদের জন্য খুব বেশি কিছু ছিল না। তারপরও, প্রোটিয়াদের বোলিং অ্যাটাকের সামনে ৭ উইকেট নিয়ে দিন কাটিয়ে দিতে না পারার কোনো কারণ দেখেন না অধিনায়ক মুশফিক।টাইগার দলপতি জানিয়েছেন, “উইকেট এমন কোনো আনপ্লেয়বল কিছু হয়নি বলে নিজেদের ওপর আমাদের একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। ভাবিনি একটা সেশনের মধ্যে ৭ উইকেট পড়ে যাবে।” টসে জিতে নিজের ভুল সিদ্ধান্তের কথা অকপটে স্বীকার করে জাতির কাছে মাফ চেয়েছেন অধিনায়ক মুশফিক আর সেই সাথে টেষ্টে খারাপ করার জন্য একচেটিয়া দায়ী করলেন বোলারদের ।প্রথম টেষ্ট ম্যাচ শেষে পুরুস্কার বিতরনের সময় এমনই অনূভুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন তাঁর মনে নেই কবে বাংলাদেশ এত অল্প রান করেছে ।
বাংলাদেশের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অল্প রানে অল আউট হওয়ার সূচনা ২০০১ সালে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পরেই ২০০১ সালে কলম্বোতে ৯০ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ২০০২ সালে ঢাকার মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশের ম্যাচে তৃতীয় সর্বনিন্ম স্কোর ৮৭ রানে অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ দল। এর পর সবচেয়ে বেশি চার বার লঙ্কানদের বিপক্ষেই একশো রানের নিচে অল আউট হয় বাংলাদেশ।শেষবার টেস্টে কোন ইনিংসে একশোর নিচে অল আউট হওয়ার রেকর্ড ২০০৭ সালে । শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর পি সারা ওভালে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৫ ওভার খেলতে পেরেছিল বাংলাদেশ।৬২ রান তুলেই সাজঘরে ফেরেছিলেন সব ব্যাটসম্যানরা। টেস্টে এটাই বাংলাদেশের সর্বনিন্ম স্কোর। ২০০৫ সালে সেই শ্রীলঙ্কার কাছেই ৮৬ রানে অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ দল।
ব্যর্থতার জন্য অধিনায়ক মুশফিকের অভিযোগের আঙুল বোলারদের দিকে উঠলেও,টাইগার ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো খোঁচা মারলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার কেপলার ওয়েসেলস। বললেন, ‘দলের ব্যাটসম্যানরা এমন সহজ উইকেটে ভালো না খেললে কঠিন উইকেটে কিভাবে ভালো করবেন?’ ম্যাচ শেষে সুপার স্পোর্টসের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,“ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ইনিংসে তারা বেশ ধারাবাহিক ছিল। কিন্তু কোন ব্যাটসম্যান ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেনি। আমি মনে করি এখানেই সমস্যাটা হয়েছে। এক বা দুইজন যদি সেঞ্চুরি পেত, তাহলে তারা দলকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস স্কোরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারতো।”
সাবেক খেলোয়াড় আর বাংলাদেশী ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খান মনে করেন দুটো ভুল সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ দল আফ্রিকার সাথে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছে ।তাঁর মতে টসে জিতেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো দল।আর সেই ভুলের মাশুল ম্যাচের পঞ্চম দিন পর্যন্ত দিতে হয়েছে তাদের। এছাড়াও তিনি মনে করেন একাদশ নির্বাচনেও ভুল করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে সুপার স্পোর্টসের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় এবং দ্বিতীয়ত, তাইজুল ইসলামকে একাদশে না রাখা। তারা মনে করেছিল পিচে অনেক পেস ও বাউন্স থাকবে।” দলের ব্যাটসম্যানরা এতো সুন্দর ব্যাটিং উইকেটে কেন খেলতে পারেনি, সেটাও অবাক করেছে আতাহারকে। মূলত দায়িত্বহীন ব্যাটিংই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
ছবিঃ ইএসপিএন