
শারমিন কবির বিথি
অনার্সে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর একটা মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো।দেখতে বেশ সুন্দরী।কিন্তু পাঁচ মিনিট কথা বলার পরই বুঝলাম মেয়েটা বেশ সহজ সরল।কোথায় কি বলতে হবে কিছুই বোঝে নাহ।এর মধ্যেই জানলাম আমার এক ছেলে বন্ধু ওর জন্য পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।এমন কি নিজের নাম চেঞ্জ করে নামের পিছনে ঠাকুর লাগিয়েছে।কারন মেয়েটা ছিলো হিন্দু আর ছেলেটা ছিলো মুসলমান।কয়েকদিন পরেই মেয়েটা জানতে পারলো ছেলেটা মুসলমান।তাই একটি প্রেমের অকাল মৃত্যু ঘটলো।মেয়েটার সঙ্গে আমার তেমন কথা হতো নাহ।ক্যাম্পাসে দেখা হলে হাই হ্যালো এতটুকুই।কয়েকদিন পরেই শুনলাম মেয়েটার ভিডিও বের হয়েছে।কেনো যেনো বিশ্বাস হলো না।কারন ওর বয়ফ্রেন্ডকে ও আমি চিনতাম।বেশ ভদ্র আর মার্জিত একটা ছেলে।ক্যাম্পাসে ওকে আর দেখা গেলো না।সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।অনেকে বললো সুইসাইড করেছে।আমি একটু দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ভুলে গেলাম সব।কিন্তু ২০১০ সালে ঘটলো আসল ঘটনা।সে পুরো উদ্যমে ক্যাম্পাসে আসলো।ক্লাস করা শুরু করলো।এবং কেউ কিছু বললে হাসিমুখে তা গ্রহন করতো।এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে হল ছেড়ে দিয়ে আমার মেসে এসে উঠলো।ঠিক আমার পাশের রুমে।মেসের প্রায় ১০০ মেয়েই এই ঘটনা জানতো।তারা বাকা চোখে তাকাতো।পিছনে ফিসফাস করতো।তবে কয়েকজন বড় আপু ব্যাপারটা সহজ করে নিয়েছিলো।তবে আমরা সবাই মিলে বাইরে ঘুরতে গেলে বা রেস্টুরেন্ট এ খেতে গেলে ওকে কেউ নিতে চাইতো নাহ।আর নিলেও ওর সঙ্গে রিকশায় কেউ উঠতে চাইতো না।একদিন আমি উঠেছি দেখে আমার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বললো তোর কোনো আত্মসম্মান বোধ নেই?আমি ও কড়া ভাষায় উত্তর দিয়ে ছিলাম। একদিন অতিষ্ঠ হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আসল ঘটনাটা কি?? ও ওর ফোনটা এগিয়ে দিলো।একটা ভিডিও বের করে দিলো।ভিডিও টার প্রথমে ওর কয়েকটা ছবি।তার নিচে লেখা ওর নাম, ওর ফোন নাম্বার, আর অকথ্য গালিগালাজ।এর পর একটা বিদেশী ন্যুড মেয়ের শরীরে ওর মাথা লাগানো ছবি।দেখলেই বোঝা যায় এটা বিদেশী।বাঙালী মেয়েরা এত ফর্সা হয় না।আর ও তো অতটা ফর্সা ছিলোও নাহ।এর পরে একটা বিদেশী পর্ন ভিডিও।মোট সাত মিনিটের ভিডিও।এটার সঙ্গে ও কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত নাহ।কিন্তু ওর ভিডিও বের হয়েছে এটা তখন পুরো ভার্সিটি,ওর এলাকার মানুষ সবাই
জানে।বরিশালেরই একটা ছেলে ওকে পছন্দ করতো।ওই ছেলের সঙ্গে রিলেশন করেনি বলেই সে এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। কিন্তু ওর রিলেশন ছিলো তখন মঠবাড়িয়ার একটা ছেলের সঙ্গে।যে কিনা মানারত ইউনিভার্সিটিতে পড়তো।যাকে আমি প্রথমেই বলেছিলাম ভদ্র।কিন্তু সে ও এই অবস্থায় পাশে থাকেনি।হাত ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে।বাবা মা ও তেমন যোগাযোগ করতো না।হয়তো বোকা ছিলো বলেই প্রচন্ড সাহস নিয়ে বেঁচে ছিলো।ওকে দেখলেই মানুষ বলতো কি রে সাত মিনিটের ভিডিওর নায়িকা।কিন্তু মেয়েটা হার মানেনি।অনার্স,মাস্টার্স শেষ করেছে।বিয়ে করেছে।এক বাচ্চার মা হয়েছে।এখন একটা প্রাইভেট ফার্মে জব ও করে।কিন্তু তার জীবন থেকে হয়তো সাত মিনিট কখনোই যাবে নাহ।
আজ তেমনি ফেবুতে ঢুকেই দেখছি ১৩ মিনিট বলে অনেক সুশীল ভাই লোক চিল্লাচ্ছে।একটা লেডিস গ্রুপে দেখলাম মহা সমারোহে লিংক বিলাচ্ছে।কিন্তু ঘটনা কি আসলে সত্যি?? পরে ওই গ্রুপেই শুনলাম এটা ওই মডেল এর চেহারার সঙ্গে মিলে এমন একটা বিদেশী মেয়ের ভিডিও।কিন্তু এর কারনে ওই মেয়ে বা তার পরিবারটির কি অবস্থা হবে একবারও কেউ ভাবছেন? আমরা দিন দিন আসলে এক হিংস্র আর নির্লজ্জ জাতিতে পরিনত হচ্ছি।মানুষকে আঘাত করা বা মানুষের দূর্বলতা নিয়ে মজা করাটা এখন আমাদের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।চারিদিকে এত অসুস্থতা সত্যিই আর ভালো লাগছে নাহ।হাপিয়ে উঠেছি।
ছবি: গুগল