
শিবব্রত দেচৌধুরী
(নিউইয়র্ক থেকে):আমার ফুল বাগানে এবারে অযাচিত ভাবেই একটা টমেটো গাছ উঠেছিল, ভেবেছিলাম গাছটা কেঁটে ফেলবো, কিন্তু পারিনি! গাছটাকে একটু নাড়াচাড়া করতেই অতি পরিচিত একটা সুবাস পেলাম যা আমাকে নিমিষেই আমার অতীতে নিয়ে গেলো, স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার ছোট্টবেলার রোদ মাখা এক শীতের সকাল! নিম গাছের ডালে পাশাপাশি বসা দুটো শালিক, ছাই রঙের পশমী চাদর গায়ে জড়িয়ে ঝুড়ি হাতে বাবা আর বাবার পেছনে পেছনে আমি- আমাদের সবজি বাগানে। বাগানে বাঁধা কপি , থাল বেগুন, লেটুস, ধনে পাতা প্রভৃতি হরেক রকমের গাছ। গুন গুন করে দু একটা মৌমাছি বেগুন ফুলের উপর উড়ে বেড়াচ্ছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে অজস্র লাল হলুদ টমেটো ঝুলে আছে। সবুজ পাতায় রাত ভর ঝরে পড়া শিশির কনার উপর রোদের আলো পড়ে হীরের মতো চিক চিক করছে। বাবার সঙ্গে আমিও মহানন্দে টমেটো পাড়ায় মত্ত! টমেটো পাতার সতেজ ঘ্রাণ , আহা! এযে অবিকল সেই ঘ্রাণ, বহু যুগ পরে আজ আবার ফিরে পেলাম! সঙ্গে করে ফিরে পেলাম, ঝিরি ঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া সেই নিম গাছ, বেগুন ফুল, মৌমাছি, গাছের ডালে শালিক , শিশির কনার হীরেয় মোড়ানো টমেটো পাতা আর – ছাই রঙের পশমী চাদর গায়ে আমার বাবাকে ! এযে আমার কাছে হীরের চেয়েও দামি। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো – ” আমাদের গেছে যেদিন একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকি?!” দিনের আলোর গভীরে লুকিয়ে থাকা রাতের তারার মতো এ ও যে সত্যি ! কখোনো ভাবিনি আমার ফেলে আসা অতীত এমনি করে ঝকঝকে হীরে হয়ে আবার আমার কাছে ফিরে আসবে!
ছবি: লেখক