শিল্পী কনকচাঁপা এবার গানের পাশাপাশি প্রাণের বাংলার পাতায় নিয়মিত লিখছেন তার জীবনের কথা। কাটাঘুড়ির মতো কিছুটা আনমনা সেসব কথা, হয়তো কিছুটা অভিমানিও। কিছুটা রৌদ্রের মতো, খানিকটা উজ্জ্বল হাসির মতো।
মিঠে যেন গুড়! ছোট বেলাটাই অদ্ভুত আনন্দের থাকে।শ্রেষ্ঠ সেই আনন্দ,আর সেটা যদি ঈদের আনন্দ হয় তাতো একেবারেই সীমাহীন। আমাদের সময় কোন কিছুই লাগামছাড়া ছিল না।স্বচ্চল বা উচ্চবিত্ত মানুষরাও একটা হিসাব বজায় রেখে চলতেন।এতো জামা,এতো দাওয়াত,এতো খাবার, এতো চ্যানেল এগুলোর ছড়াছড়ি একেবারেই ছিলোনা। কিন্তু ছিলো নির্মম আনন্দ। আমি আমার ঈদের কথা বলছি।আগে বোধ হয় ঈদ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা দিনে হত।শেষ রোজায় চাঁদ দেখা থেকেই আনন্দ শুরু হত।তার আগে পনেরো রোজার সময় আব্বা গজ কাপড় কিনে লেস রঙিন বোতাম দিয়ে আমাদের তিন বোনের জন্য পরীদের জামা বানাতেন।সে এক অদ্ভুত ভাললাগার গল্প! এক রকম কাপড়েই তিন রকম ডিজাইন হত।হতে হত,কারন মেঝবোন রত্নাপা সবসময় অন্য ডিজাইন পছন্দ করতেন।তাতেই আমাদের একই রকম কাপড় হওয়া সত্বেও জামা আলাদা হয়ে যেত।কাপর এর প্যাকেট বুকে নিয়ে আব্বা আফিস থেকে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম।অফিস থেকে ফিরলে তার পিছু পিছু থাকতাম।কখন আব্বার মুড আসে,কখন সুই স্কেল ইস্ত্রি আর সেলাই মেশিন নিয়ে বসবেন।আব্বা নানান ঢং করে সেই সময় কপট বিলম্বিত করতেন।বলতেন আমার কেমন যেন ঘুম পেয়ে যাচ্ছে,যে আমাকে চা খাওয়াবে তার জামা আগে হবে! আহা! কি অপূর্বই না ছিল সে অপেক্ষা! একসময় জামার গলা হত,হাত হত,পাইপিন, ফ্রিল,বকরম,আহা,বোতাম হলেই ওতে গলা ঢুকিয়ে আ

আমার বাবা-মা
মি নতুন কনা হয়ে যাবো, হয়তো বা পরী।আব্বা বলতেন উহু,গান শোনাও,তিনটা,আমি বলতাম আব্বা,আপারা তো গান গাচ্ছেন না ওদের জামা হল যে? এভাবে একসময় জামা লুকিয়ে দিন পার করে চাঁদ রাত আসতো।শুরু হত মেহেদী যোগাড় করা,আমাদের সময় মেহেদী বিক্রি হতোনা।পাড়ার কারো গাছ থেকে আনতাম।চাঁদ দেখে রাতে ঝাটার শলার সাহায্যে মেহেদী আঁকতাম।আম্মা রাতেই কোটা বাছা করতেন।বড় আপারা ঘর গোছাতেন।আমি বাদাম ছিলে ভিজাতাম,শিউলির শুকনো বোঁটা ভিজাতাম।হয়তো বালিশের ওয়াড় বদলে দিতাম।সকাল হত মার ডাকে।ভোররাতে আব্বা নারিকেল কুরিয়ে দিতেন আম্মাকে।চুলায় গরম পানি হচ্ছে, একজন একজন গোসল সারতাম।কি অজানা কারনে নতুন চাদর নতুন জামা সব কিছুতেই অন্যরকম গন্ধ ফুটে উঠতো।ঈদের দিন আম্মা কখনওই বকতেন না।সকাল থেকেই শুরু হত ভিক্ষুক এর আনাগোনা। আম্মা তাদের খুব আপ্যায়ন করতেন।পাড়া প্রতিবেশী আসতেন,আত্মিয় আসতেন।সবার কি আন্তরিকতা! কোলাকুলি, হাসিমুখ,মজার খাবার,সামান্য একটু সালামি,সব মিলিয়ে ঈদ হয়ে উঠতো যেনো বেহেস্তের উৎসব। কিন্তু আমি জানতাম এমন আনন্দ ঘরে ঘরে কম বেশী। কিন্তু আমার যে আনন্দ,তা পৃথিবীর আর কাউরো নেই।সেই আনন্দ কি তা জানোতো? সেই আনন্দ হল বাবার হাতে বানানো জামা! আলহামদুলিল্লাহ
ছবি: লেখক