পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।

আবুল হাসনাৎ মিল্টন
না পাবার দু:খ
আমার যাপিত জীবন ছিলো
শুধুই বিষাদে মোড়া
দূর পথপানে চেয়ে থাকে
জনমদুখী চোখ জোড়া
কোথায় আছো তুমি কেমন আছো
সে খবর আমি কোথায় পাব?
তোমাকে না পাবার দু:খ বুকে নিয়ে
একদিন আমি মরে যাব!
অরণ্য কি ভুলে গেছে আজ
ঝরে যাওয়া পাতার কথা
মনে রেখেছে কি দুপুরের রোদ
কিংবা বেড়ে ওঠা লাজুক লতা?
কোথায় আছো তুমি কেমন আছো
সে খবর আমি কোথায় পাব?
তোমাকে না পাবার দু:খ বুকে নিয়ে
একদিন আমি মরে যাব!
তোমার শহরে মেঘের বহরে
কোথাও আমি তো নেই
জমানো শোকের অস্থিরতায়
হারিয়ে ফেলেছি খেই।
কোথায় আছো তুমি কেমন আছো
সে খবর আমি কোথায় পাব?
তোমাকে না পাবার দু:খ বুকে নিয়ে
একদিন আমি মরে যাব!

ফারহানা নীলা
অনিদ্রার ত্রিশূল
কিছু অনিশ্চিত দূরত্ব আর নিশ্চিত ভুল ছিল
কিছু একটা সময় সূক্ষ্ম তন্তুর জালে আটকে ছিল দম বন্ধ করে!
তখন আমাদের পরিচয় ছিল; ছিল লেনাদেনা বেহিসাবি,
আমরা সেদিন নিজের অজান্তে মাড়িয়ে গেছি পায়ে পায়ে!
কিছু নির্ভরতা লটকে ছিল বারোহাতে; কাঁকনের রিনিঝিনি শব্দে,
কিছু আহ্লাদী প্রশ্নে ছুঁড়ে দিয়েছি প্রশ্নবাণ খুব কাছের ভেবে।
তখন আমাদের ক্ষয়ক্ষতি শুরু; বিমুখ সময়ের সমষ্টি জড়ো করে
আমরা আবার পুষিয়ে দিতে চেয়েছি ক্ষত আর ক্ষতি আলগোছে।
কিছু দূরত্বের পরিধি নিয়ে গেছে ব্যাস আর ব্যাসার্ধ বরাবরে
কিছু আবেগের তোড়ে ছিটকে পড়েছি কেন্দ্র থেকে দূরে।
তখন কাঁটা কম্পাসে তীব্র কাঁপন; রিখটার স্কেলের ভুল মাপে
আমরা আবার খতিয়ে দেখেছি ভুলগুলো ; মাচায় লতিয়ে।
নিরুৎসাহিত বসবাসের কারণে ভাটা পরে উৎসাহে
নিরুপদ্রব পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা তখন যোজন যোজন এগিয়ে।
এখন কেবলই উড়ে যায় শ্বেত কপোত-কপোতী তাদের গন্তব্যে
শূন্য ঘরে আর আসে না শান্তির ঘুম হয়ে!
কিছু ঘুম তোমারও দরকার ছিল, আমারও জরুরি ছিল ঘুম
অথচ রাত জাগা ভোর ভবিতব্য জেনে আজো ডেকে আনি ঘুম অনিদ্রার ত্রিশূলে!
এ ফোঁড়, ও ফোঁড়… ফাঁপড় লাগে বুকে,চোখে আর ভবিতব্য ঘিরে!
জানালার কার্নিশে একাকী চাঁদে গ্রহণ লাগে; ভালবাসা পেঁচিয়ে।

শওকত আহসান ফারুক
অপবাদ
অকপটে বল্লেন সবাই, কবি বেশ রোমান্টিক
যেন ফুল পাখি কাশবন, ঝরাপাতা নদীস্রোত মাতাল মহুয়া বন
কবিতা বলতে কবি প্রেম বুঝে, পবিত্র অপবাদ।
কবিতা তবে কি? বিরহ বিষন্ন বিস্ময়, দূরে সবুজ পাহাড়।
কবিতা ভোরের শিশির, মেঠোপথ, জোনাকি রাত।
কবিতা ধোঁয়া উঠা উনুনে আউশ ধানের গরম ভাত, গাওয়া ঘি, কাঁচা লংকা, ওমলেট, বরফ কুঁচি স্কচ হুইস্কির গ্লাশ।
কবিতা রাতের ট্রেন, তোমার ফিরে যাওয়া, রেস্তোরাঁ সামসাদ বেগম।
কবিতা নির্মম প্রত্যাখ্যান, অযাচিত উপেক্ষা, নির্দোষ নির্ঘুম রাত্রি যাপন।
কবিতা মুশকিল দুর্বোধ্য উপমা স্থবির, মারিজুয়ানা সুখটান।
কবিতা ধর্মঘট, সর্বনাশা বাঁকা নদী বাঁকা জল, ধ্রুপদি বাউল।
কবিতা নেশাতুর, অর্ধচন্দ্র, সভ্যতা, নির্বিচার ধর্ষণ।
কবিতা রূপোপজীবিনী, অধার্মিক রাজনৈতিক রাজহাঁস।
কবিতা অরণি, ইচ্ছে ভুলে ফেলে যাওয়া প্রেমের উপন্যাস।

শ্রাবণী জুঁই
প্রস্থান
আপনারাও এলেন আর ফিরে যাবার খুব তাড়া এলো
জানেন তো বেদনার্দ্র হৃদয়ের ক্ষত শুকোতে লাগে নোনা হাওয়া, অবিমিশ্র অভিমান
আজ ভোর বেলায় ঘুমের বাড়িতে তালা লাগিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাচ্ছি
ঘরদোর খোলাই রইল আপনারা থাকুন
আরাম কেদারায় গা এলিয়ে বসবেন না হয় সকালের উষ্ণ রোদে
এই যে বারান্দার এ কোনটায়
এখানে খুব সকালে আলতা রাঙা অচেনা এক পাখির মেলা বসে জানেন
শিষ দিয়ে গান গায় নেচে নেচে করে উৎসব
উৎসব কিসের?
প্রেম কিংবা অতি আবেগীয় উষ্ণতা হয়ত
হা হা হা
সে যাক পানীয়জল দেবো?
হাত মুখ ধোবেন?
অতটা পথ এলেন এইবেলা জিরিয়ে নিন তো
কি বললেন? অত তাড়া কিসের?!
হা হাহা…তাও ঠিক
কি জানেন কড়ি বড়গায় রাত নামলে ঘরটা কেমন
দুঃখী হয়ে যায়
কত কত দিন দাঁড়িয়ে থেকেছি সদর দরজায় এই আপনাদের জন্য
কলিংবেল জানান দেবে আগমনী বার্তায় যে আপনারা এলেন!
জানেন ওই বছর গুলো ছিল স্বপ্নহীন
ওই বছর গুলোয় কি যে ঘুমের ঘাটতি
বড্ড বেশি ক্লান্তি জমছিল মেরুদন্ডে, বুকের ভেতর মেঘ
ঠিক যখন ভাবছি আর বুঝি আসবেন না আমার ঘরে
বসবেন না পাশটি ঘেঁষে
কি অদ্ভুত দেখুন! তখনই কি না কলিংবেল বাজল ভীষণ শব্দে!
সে যাক! এইবার নিশিন্তি!
শুনতে পাচ্ছেন? কড়ি বড়গায় বৃষ্টির শব্দ?
ঘরটা কি রকম বদলে গেল…দেখেছেন?
কেন?
আরে! বাসিন্দা বদলে ঘরের খুব আনন্দ হয় জানেন না?!
হা হা হা হা….
ভোর হচ্ছে…চললেম কেমন?
ভালো থাকবেন।।