
নার্গিস আক্তার
তখন শব্দহীন নির্জন দ্বিপ্রহর। পুবের জানালার পর্দাটা সামান্য তুলে দেয়া। জানালা ঘেষে ছোট্ট একটা টেবিল, একটা কাঠের চেয়ার।এক মধ্যবয়সী নারী সেই চেয়ারটিতে বসে পত্রিকা পড়ছেন। অথবা অন্য কিছু! প্রতিদিন এ-সময়টিতে এখানে বসে একান্তই নিজের কিছু সময় তিনি নিজের সাথেই কাটান!এই জায়গাটি, এই সময়টি বড়ো বেশি আপন তাঁর! আজো সে দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে।স্পষ্ট দেখতে পাই, সেই নারী একলা দুপুরে চেয়ারটিতে বসেছেন। চিকন তারে গেঁথে রাখা চিঠিগুলো খুলছেন আর পড়ছেন একটার পর একটা। তার বাবার লেখা, অন্য শহরে পড়তে যাওয়া সন্তানদের লেখা অথবা কোনো স্বজন-প্রিয়জনের!তিনি চিঠি পড়ছেন আর আঁচলে চোখ মুছছেন।বিশেষ করে তাঁর বাবার লেখা চিঠি পড়ে তিনি অঝোরে জল ঝরাতেন! শিশুবেলায় তিনি তার মাকে হারিয়েছিলেন, বাবাকেই বানিয়েছিলেন তাঁর পৃথিবী, তাঁর বন্ধু।এ-যুগেও পিতা-কন্যার এমন মধুর সম্পর্ক বিরল। আমি এখনো স্পষ্ট দেখতে পাই, সেই নারী আঁচলে চোখ মুছে মুছে চিঠির উত্তর লিখছেন! মধ্য দুপুরে একলা ঘরে তাঁর অনুভতির দুয়ার তিনি খুলে দিয়েছেন। গুটি গুটি অক্ষরে লিখছেন তার পিতাকে, অথবা অন্য কোন প্রিয়জনকে। লিখছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে আসলে, আনন্দ ফুটে উঠতো তার চোখে মুখে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তিনি চিঠি নিয়ে বসতেন। পড়তেন বারবার। আর টপটপ করে ঝরতো অশ্রুস্রোত। সেই দৃশ্য এখনো স্পষ্ট! মধ্য দুপুর! একটি টেবিল, একটি চেয়ার, একটি কলম আর একটি আটপৌরে লিখবার খাতা। তিনি চিঠি পড়ছেন তিনি কাঁদছেন তিনি চিঠি লিখছেন তিনি কাঁদছেন! তিনি পড়ছেন আনন্দ-বেদনার কাব্য তিনি লিখছেন আনন্দ-বেদনার কাব্য! মা-কে বলি, তুমি চলে গেছো সেই কবে! তুমি থাকতেই এ-কাব্য হারিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়! আর এখন! সেই আনন্দ-বেদনার কাব্য এক আনন্দ-বেদনার স্মৃতি। কেবল-ই স্মৃতি! অনেকটা তোমার-ই মতন!!
ছবি: গুগল